আমদানি রপ্তানি লাইসেন্স কিভাবে করবেন
বাংলাদেশের একটি লাভজনক ব্যবসা হল আমদানি ও রপ্তানি ব্যবসা। আপনিও একটি সফল আমদানি-রপ্তানি ব্যবসা চালু করতে পারেন বাংলাদেশে। একটি আমদানি এবং রপ্তানি লাইসেন্স প্রাপ্ত করা আবশ্যক, যদিও, একটি আমদানি এবং রপ্তানি ব্যবসা শুরু করার আগে ইমপোর্ট রেজিষ্ট্রেশন সার্টিফিকেট (IRC) এবং এক্সপোর্ট রেজিষ্ট্রেশন সার্টিফিকেট (ERC) করাতে হয়। আজকে আমরা দেখবো কিভাবে ইমপোর্ট রেজিষ্ট্রেশন সার্টিফিকেট (IRC) করা যায়।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর মতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি ৫২.০৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যেখানে এর আমদানি দাঁড়িয়েছে ৬৫.৪৮ বিলিয়ন ডলারে। দেশের প্রধান রপ্তানির মধ্যে রয়েছে তৈরি পোশাক, হিমায়িত খাদ্য, চামড়াজাত পণ্য এবং পাটজাত পণ্য, যেখানে এর প্রধান আমদানির মধ্যে রয়েছে মূলধনী যন্ত্রপাতি, পেট্রোলিয়াম পণ্য, রাসায়নিক এবং বস্ত্র শিল্পের কাঁচামাল। তৈরি পোশাক খাত বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় অবদান রাখে, যা এর মোট রপ্তানির 80% এরও বেশি।
ইমপোর্ট রেজিষ্ট্রেশন সার্টিফিকেট পেতে নিম্নলিখিত ধাপসমূহ অনুসরন করতে হয় (Import Registration Certificate -IRC Issue)
১. আমদানি ও রপ্তানির চীফ কন্ট্রোলারের অফিস থেকে আমদানি নিবন্ধন ফরম সংগ্রহ করুন।
২. আমদানি লাইসেন্স নিবন্ধনের জন্য নির্ধারিত হারে নিবন্ধন ফি জমা দিতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক বা সোনালী ব্যাংকের শাখায় সিডিউল ফি জমা দিন।
৩. নির্ধারিত ফিস সহ আরও কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন ফরম পূরণ পূর্বক আমদানি ও রপ্তানির চীফ কন্ট্রোলারের অফিস জমা দিন।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসমূহ
- প্রতিষ্ঠানের নাম ও ঠিকানায় হালনাগদকৃত ট্রেড লাইসেন্স
- ই-টিনআইএন/আয়কর প্রত্যয়নপত্র
- প্রতিষ্ঠানের আর্থিক স্বচ্ছলতা সম্পর্কিত মনোনীত ব্যাংক কর্তৃক প্রত্যয়নপত্র বা ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট
- স্বীকৃত চেম্বার/ব্যবসায় সংশ্লিষ্ট ট্রেড এসোসিয়েশনের হালনাগদকৃত সদস্যতা সনদ
- আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র ও সদ্যতোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- বিশেষায়িত ব্যবসায়ভুক্ত আমদানির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় লাইসেন্স/অনুমতিপত্র (প্রযোজ্যক্ষেত্রে)
- অংশীদারী ব্যবসায় হলে রেজিস্টার্ড অংশীদারী দলিল (আরজেএসসি/সাব-রেজিস্ট্রি অফিস হতে জারিকৃত)
- লিমিটেড কোম্পনির ক্ষেত্রে সার্টিফিকেট অব ইনকর্পোরেশন, আর্টিক্যাল অব এসোসিয়েশন, মেমোরেন্ডাম অব এসোসিয়েশন
সাধারণভাবে ইমপোর্ট রেজিষ্ট্রেশন সার্টিফিকেট (IRC) এর জন্য উপরোল্লোখিত কাগজপত্রই যথেষ্ট। তবে শিল্প প্রতিষ্ঠান, যৌথ বিনিয়োগ/১০০% বিদেশী বিনিয়োগ, ইন্ডেন্টিং ফার্ম ও বিশেষ উদ্দেশ্যে বা বিশেষ পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে আরও কিছু কাগজপত্র জমা দিতে হয়। যা এই লিংকে ক্লিক করে জেনে নিতে পারবেন।
আইনি পূর্বশর্তঃ
বাংলাদেশে রপ্তানি-আমদানি ব্যবসা শুরু করতে হলে আপনাকে অবশ্যই বেশ কিছু আইনি বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। আপনার সাম্প্রতিকতম আইন এবং প্রবিধানগুলি মেনে চলা উচিত কারণ এই আইনি প্রয়োজনীয়তাগুলি সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয় তা স্বীকার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ উপরন্তু, আপনার কোম্পানি সমস্ত প্রযোজ্য জাতীয় আইন মেনে চলছে তা নিশ্চিত করার জন্য আপনাকে অবশ্যই যোগ্য আইনি পরামর্শ পেতে হবে। বাংলাদেশে একটি রপ্তানি-আমদানি কোম্পানি চালাতে আপনার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিচে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
ব্যবসা নিবন্ধন:
আপনাকে অবশ্যই আঞ্চলিক সরকারী অফিস থেকে ট্রেড লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হবে এবং জয়েন্ট স্টক কোম্পানি ও ফার্মের নিবন্ধকের (RJSC) সাথে আপনার ব্যবসা নিবন্ধন করতে হবে।
আমদানি ও রপ্তানির জন্য লাইসেন্স: আপনি যে পণ্য আমদানি বা রপ্তানি করছেন তার উপর নির্ভর করে, আপনাকে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ট্যারিফের মতো উপযুক্ত সরকারি সংস্থা থেকে লাইসেন্স এবং রপ্তানি নিবন্ধন শংসাপত্র (ERC) বা আমদানি নিবন্ধন শংসাপত্র (IRC) অর্জন করতে হতে পারে। কমিশন বা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর:
বাংলাদেশে একটি রপ্তানি-আমদানি ফার্ম শুরু করতে, আপনাকে অবশ্যই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে একটি ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন) পেতে হবে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তির সাথে সম্মতি: বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সদস্য হিসাবে, বাংলাদেশকে সমস্ত ডব্লিউটিও এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তির নিয়ম ও প্রবিধান মেনে চলতে হবে।
কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স:
বাংলাদেশ কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই সমস্ত আমদানি ও রপ্তানিকৃত পণ্য পরিষ্কার করতে হবে। আপনাকে অবশ্যই শুল্ক আইন মেনে চলতে হবে, যার মধ্যে সমস্ত প্রযোজ্য ফি এবং ট্যাক্স প্রদান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
শ্রম আইনের সাথে সম্মতি: আপনাকে অবশ্যই বাংলাদেশের সমস্ত প্রযোজ্য শ্রম আইন মেনে চলতে হবে, যার মধ্যে ন্যূনতম মজুরি, কর্মঘণ্টা এবং অন্যান্য কর্মসংস্থান সুবিধাগুলি নিয়ন্ত্রণ করে।
আমদানি লাইসেন্স নিবন্ধন ফি হার (IRC FEE)
আপনার আমদানির পরিমাণের উপর ভিত্তি করে আমদানি নিবন্ধন ফি নির্ধারিত হয়ে থাকে এবং এই আমদানি নিবন্ধন লাইসেন্স এক বছরের জন্য প্রদান করা হয়ে থাকে। আমদানি নিবন্ধন লাইসেন্স প্রতিবছর নবায়ন করতে হয়। নিবন্ধন ফি ও নবায়ন ফি হার বিস্তারিত নিচে উল্লেখ করা হলো:
- নিবন্ধন ফি ও নবায়ন ফি জমার কোড ১-১৭৩১-০০০১-১৮০১
- সারচার্জবিহীন নবায়নের সময়সীমা প্রতিবছর ১লা জুলাই হতে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন
- সকল প্রকার ফি এর উপর ১৫% ভ্যাট প্রযোজ্য। ভ্যাট কোড ১-১১৩৩-০০১০-০৩১১ (ঢাকা আঞ্চলিক দপ্তরের জন্য)
- নিবন্ধন ফি ও নবায়ন ফি এর হার:
শ্রেণী নং | বার্ষিক আমদানি মূল্যসীমা | প্রাথমিক নিবন্ধন ফি | বার্ষিক নবায়ন ফি |
---|---|---|---|
প্রথম | ৫ লক্ষ টাকা | ৫,০০০ টাকা | ৩,০০০ টাকা |
দ্বিতীয় | ২৫ লক্ষ টাকা | ১০,০০০ টাকা | ৬,০০০ টাকা |
তৃতীয় | ৫০ লক্ষ টাকা | ২৪,০০০ টাকা | ১০,০০০ টাকা |
চতুর্থ | ১ কোটি টাকা | ৪০,০০০ টাকা | ১৫,০০০ টাকা |
পঞ্চম | ৫ কোটি টাকা | ৫০,০০০ টাকা | ২২,০০০ টাকা |
ষষ্ঠ | ২০ কোটি টাকা | ৬০,০০০ টাকা | ২৪,০০০ টাকা |
সপ্তম | ৫০ কোটি টাকা | ৭০,০০০ টাকা | ২৮,০০০ টাকা |
অষ্টম | ৫০ কোটির উর্দ্ধে | ৮০,০০০ টাকা | ৩২,০০০ টাকা |
- নবায়ন বই ফি ১,০০০ টাকা।
আমদানি রপ্তানি লাইসেন্স এর জন্য যে সকল কাগজপত্র প্রয়োজন তা নিম্নরুপঃ
জাতীয় পরিচয় পত্র এবং ছবিঃ
আবেদনকারী সহ কোম্পানীর সকল পরিচালকদের জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি এবং সদ্যতোলা পাসপোর্ট সাইজে রঙ্গিন ছবি ।
পাসপোর্ট এবং ওয়ার্ক পারমিট ভিসাঃ
- কোম্পানীতে বিদেশী কোন পরিচালক থাকলে তাদের পাসপোর্ট এবং বিডা কর্তৃক ওয়ার্ক পারমিট
- ভিসা এর ফটোকপি লাগবে। কোম্পানীতে বিদেশী কোন পরিচালক বাংলাদেশে অবস্থান না করলে অথবা বিডা কর্তৃক ওয়ার্ক পারমিট ভিসা না থাকলে তাহলে তারা বাংলাদেশে অবস্থান করছে না এই মর্মে একটি আন্ডারটেকিং দিতে হবে।
ট্রেড লাইসেন্সঃ
যে কোন ব্যবসার জন্য ট্রেড লাইসেন্স হচ্ছে ব্যবসার অনুমতিপত্র। আবেদনের সময় অবশ্যয়
ব্যাংক সলভেন্সিঃ
ট্রেড লাইসেন্স এর ঠিকানায় ব্যাংক সলভেন্সি নিতে হবে। ট্রেড লাইসেন্স করার পর ব্যবসার নামে একটি ব্যংক একাউন্ট খুলে নিন। এখানে লক্ষণীয় যে, আপনার প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক একাউন্ট খুলবেন। কোন মতেই ভিন্ন নাম দিবেন না। কিছুদিন লেনদেন করার পর ব্যাংককে বলুন আপনার ব্যবসার নামে প্রত্যায়ন পত্র দিতে। অর্থাৎ ব্যাংককে বলবেন আপনাকে একটি ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট দিতে।
টিন সার্টিফেকেটঃ
বর্তমানে অনলাইনে সহজেই ইটিন বা টিন সার্টিফিকেট করা যায়। এরজন্য কোন ফি প্রয়োজন হয় না। অর্থাৎ আপনি নিজেই অনলাইনে বিনামূল্যেTIN সার্টিফিকেট করতে পারেন।
স্কীকৃত ট্রেড আ্যসোসিয়েশন থেকে বৈধ মেম্বারশিপঃ
মেম্বার শিপ সার্টিফিকেট অর্থাৎ আমদানি বা রপ্তানি ব্যবসা করার ক্ষেত্রে আপনাকে যে কোন একটি ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্য হতে হবে এবং সংঘ থেকে সদস্য সনদ গ্রহণ করতে হবে।
ভ্যাট সার্টিফেকেটঃ
বর্তমান প্রতিটি উৎপাদন কিংবা সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে বাধ্যতামূলকভাবে ভ্যাট প্রদান করতে হয়। আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কোন উৎপাদনশীল কিংবা সার্ভিস প্রদান করিলে ভ্যাট সার্টিফিকেট অবশ্যই প্রয়োজন হবে। এখন অবশ্য অনলাইনে ভ্যাট রেজিট্রেশন করতে পারেন। নিজে নিজে করতে না পারলে এক্সপার্ট কারো সাহায্য নিয়ে সহজেই অনলাইনে ভ্যাট সার্টিফিকেটকরতে পারেন।
আন্ডারটেকিংঃ
কোম্পানীতে বিদেশী কোন পরিচালক বাংলাদেশে অবস্থান না করলে অথবা বিডা কর্তৃক ওয়ার্ক পারমিট ভিসা না থাকলে তাহলে তারা বাংলাদেশে অবস্থান করছে না এই মর্মে একটি আন্ডারটেকিং দিতে হবে।
জয়েন্ট ভেঞ্চার এগ্রিমেন্টঃ
কোম্পানীতে সকল পরিচালকদের মধ্যে ব্যাবসায়িক বা জয়েন্ট ভেঞ্চার এগ্রিমেন্ট থাকতে হবে। আমদানি রপ্তানি লাইসেন্স এর আবেদনের সময় জয়েন্ট ভেঞ্চার এগ্রিমেন্ট এর ফটোকপি সাবমিট করতে হবে ।
রপ্তানি নিবন্ধন এর নিবন্ধন ফিঃ
ক্রমিক বিভিন্ন ধরনের রপ্তানি সনদ নিবন্ধন ফি
ক্রমিক | বিভিন্ন ধরনের রপ্তানি সনদ | নিবন্ধন ফি |
১ | রপ্তানি নিবন্ধন সনদ( ই আর সি) | ১০,০০০/- |
২ | রপ্তানি নিবন্ধন সনদ( ইনভেন্টিং সার্ভিস) | ৫০,০০০/- |
টি.আর.ডাব্লিউ কর্তৃক আইনী সেবা:
তাহমিদুর রহমান রিমুরা ওয়াহিদ (টি.আর.ডাব্লিউ) একটি সনামধন্য ‘ল’ চেম্বার যেখানে ব্যারিস্টারস , আইনজীবীর মাধ্যমে আমদানি রপ্তানি লাইসেন্স সহ অন্য সকল বিষয়ে আইনগত সহায়তা, পরামর্শ প্রদান করে থাকে। কোন প্রশ্ন বা আইনী সহায়তার জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করুনঃ-
GLOBAL OFFICES:
DHAKA: House 410, ROAD 29, Mohakhali DOHS
DUBAI: Rolex Building, L-12 Sheikh Zayed Road
LONDON: 1156, St Giles Avenue, Dagenham
Email Addresses:
info@trfirm.com
info@tahmidur.com
info@tahmidurrahman.com
24/7 Contact Numbers, Even During Holidays:
+8801708000660
+8801847220062
+8801708080817
0 Comments